জোনাকির আলোত পশ্চিম ডুয়ার্সের উদিস : প্রসঙ্গ - ‘ডুয়ার্স ডে’
জোনাকির আলোত পশ্চিম ডুয়ার্সের উদিস : প্রসঙ্গ - ‘ডুয়ার্স ডে’ -ড. রতন চন্দ্র রায়
ডুয়ার্স মানে বৈচিত্রের ভিতিরাতে ঐক্য, ডুয়ার্স মানে চা-বাগান, বন-জঙ্গল, পাহাড় আর ছোট বড় নদ-নদী আরৌ ডাবরি ; ডুয়ার্স মানে এইঠে আছে দুইটা পাতাড়ির নগত অ্যাকেনা কড়ি । ডুয়ার্স মানে টোটো, আদিবাসী, নেপালী, কোচ, মেচ, রাভা, রাজবংশী, নমশূদ্র, কায়স্থ, ব্রাহ্মণ,বিহাড়ী আরৌ মারোয়াড়ি । ডুয়ার্স মানে হিন্দু , মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রীষ্টান সগায় একে নগে করে কাজ-কারবারি । ডুয়ার্স মানে ভাওয়াইয়া, বাউল, ভোজপুরি,আদিবাসী, নেপালী, বাংলা, হিন্দি আরৌ ভাটিয়ালি । ডুয়ার্স মানে চা-বাগান আর দহলাবাড়িত মেল্লা ছোট-বড় আরৌ আটগুটিয়া আলি। ডুয়ার্স মানে খোল, করতাল, ঢাক, ঢোল, একতারা- দোতারা, মাদোল আরৌ আছে ইচিত্-বিচিত্ খাবার ।
আইসো ডুয়ার্স বাসি ভাই হামরা সোগায় মিলি- জাতি, ধর্ম, বর্ণ, এমনকি কার কী ভাষা, কী সংস্কৃতি তামানে পাছিলা পাখে থুইয়া আইসা ১৪-ই জানুয়ারী 'ডুয়ার্স ডে' পালন করি, ঐ দিনকা সগায় ডুয়ার্সের ঘড়ে ঘড়ে গোছা জ্বলাই আর জ্বললোই করিয়া ডুয়ার্সের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনটাক আরৌ সুকুদ্দম করি। হাত জোড় করিয়া এই আটুস আরো আবদার করেছ ডুয়ার্সের সৌগ মানষিঠে।
কবির ভাষায় কবার গেলে-
‘আইসো ডুয়ার্স বাসি ভাই,
সোগায় হামরা ডুয়ার্সের মানষি,
হামার কারো সাথে কোনো ভেদাভেদ নাই ।
এলা ‘ডুয়ার্স ডে’ গুরুত্ব, ১৪-ই জানুয়ারীর গুরুত্ব আরো ডুয়ার্সের প্রাচীন ইতিহাসের কিছু তথ্যমূলক আলাচনা অলপ্ করি তোমারলাক শুনাই।
এক সমাই যেলা আর্থ- সামাজিক আরো রাজনৈতিক কারণত ডুয়ার্স বাসির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবার ধরিসিলো ঠিক ঐ নাখান সমাই ডুয়ার্সোক ভাল পাওয়া-শান্তি কামী মানষিলা বুক চিতিয়া আগেয়া আসিয়া হাতজোড় করি, গলাত গামছাদিয়া আটুস আরো আবদার জানাইসিলেন সাম্প্রদায়িক হানাহানি বন্ধ করিবার বাদে । তার পাছোত নানান আলাপ আলোচনার মধ্যদিয়া সেইদিনকা রক্ষা পাইসিলো ভেল্লা নিরিহ মানষির প্রাণ। ঐ দিনেই শুভবুদ্ধির মানষিলা মনস্থির করিসিলেন ডুয়ার্সের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আইসা দিনোত রক্ষা করিবার তানে পত্তিছর ‘ডুয়ার্স ডে’ পালন করা হবে। সেই থাকি ডুয়ার্স ডে পালনের ভাবনা-চিন্তা ।
আর ডুয়ার্স ডে - হিসাবে ১৪-ই জানুয়ারী দিনটাকেবা ক্যানে নির্ধারণ করা হইল তারে গুরুত্ব পূর্ণ কারণটা হইল, ১৮৬৪ সালে যেলা দ্বিতীয় 'ইঙ্গ-ভূটান' যুদ্ধত ভূটিয়ালাক পরাজিত করিয়া এই পশ্চিম ডুয়ার্সের শাসনভার ব্রিটিশেরঘর নিজের হাতোত নিবার কাথা ভাবেছে ঐ সমায় ব্রিটিশ সার্জেন রেইনী (Rainee) ঐ সময়কার ব্রিটিশ কর্তালাক এই ১৪-ই জানুয়ারী দিনে চিঠি নেখি জানাইসিলেন ডুয়ার্সের সামরিক, প্রশাসনিক গুরুত্ব আরো অর্থনৈতিক উন্নতির সম্ভাবনার কথা। এইবাদে ঐতিহাসিক ঐ দিনটাক ফম থুবার বাদে ১৪-ই জানুয়ারী দিনটাকে ‘ডুয়ার্স ডে’ হিসাবে পালন করা হছে ।
এইবার কাথা হইল হামরা যে ডুয়ার্স অঞ্চলত বসবাস করিছি এইটা আসলে 'পশ্চিম ডুয়ার্স ' অঞ্চল বা 'বেঙ্গল ডুয়ার্স' আরো কাহ কাহ 'Non- Regulated area' বুলি কয়া থাকে । এই অঞ্চলটার এলা ভৌগোলিক সীমানা হইল জলপাইগুড়ি জেলার পূর্বভাগ মানে তিস্তা নদীর পূর্বপাড় থাকিয়া গোটায় আলিপুরদুয়ার জেলার পূর্ব সীমানার পাখে বহিযাওয়া সংকোশ নদীর পশ্চিম পাড় পর্যন্ত। আর ডুয়ার্সের পূর্ব অংশটা আসাম রাজ্যের ভিতিরাত পরিসে, সেইটা হইল সংকোশ নদীর পূর্বপাড় থাকিয়া আসামের ধানশিড়ি নদীর পশ্চিম পাড় পর্যন্ত।
এই গোটায় জাগাখানে বন-জঙ্গল আরো পাহাড়ে ঘিড়া হামার বগলের ভূটান রাষ্ট্রের দক্ষিনোত অবস্থিত।
আর এই জাগাখানোক Non-regulated এলাকা কবার কারণ হইল এই জাগাখানোত ব্রিটিশের Parmanent suttlement লাগু হয় নাই, ওই বাদে Non- Regulated এলাকা ।
এবার আসা যাউক Dooars শব্দের অর্থ বিষয়ত, Dooars শব্দটার অর্থ হইল- Door (দুয়ার/ প্রবেশদ্বার/ দরজা) যেইটা কিনা হামার ভারতবর্ষের বগলের দ্যাশ ভূটান ঢুকিবার দুয়ার(হামার ভারতবর্ষ থাকিয়া)। গোটায় পূব-পশ্চিম ডুয়ার্স জাগাখান থাকি ভূটান ঢুকিবার তানে তামাল্লা মিলিয়া ১৮ টা দুয়ার আছিল। যার ১১টা দুয়ার পরিসে পশ্চিম ডুয়ার্সোত আর ৭ টা পূব-ডুয়ার্সোত। ঐলা হইল-পশ্চিম ডুয়ার্সে :- ১) ডালিম দুয়ার (বর্তমান-কালিংপং জেলা) ২) ময়নাগুড়ি দুয়ার (বর্তমানে ঝালং-বিন্দু জলঢাকা নদীর এলাকা) ৩) চামুর্চী দুয়ার (চামুর্চী বাজারের বগলত) , ৪) লক্ষ্মী দুয়ার (জয়গাঁ ফুন্টসিলিং দুয়ার), ৫) বক্সা দুয়ার (বক্সা পাহাড়), ৬) ভল্কা দুয়ার , ৭) বাড়া দুয়ার (কুমারগ্রাম), ৮) গোমার দুয়ার, ৯) রিপো দুয়ার, ১০) বিজনী দুয়ার ,১১) চেরুং দুয়ার (৬-১১ নং দুয়ারলা দুর্গম ও জঙ্গলভরা বর্তমানে ব্যবহার হয় না।
পূব ডুয়ার্সের ৭ টি দুয়ার হইল- ১) বড় গোমার ২) কালিং, ৩) সুরবালা) ৪) বাসনা ৫) চাপাংগোড়ি ৬) চাপাকাহামা ৭) বিজনী।
ভূটান পাহাড় থাকিয়া আইসা নানান নদ-নদীর দুই ধারি আরো গিরিপথ ধরিয়া ষষ্ঠদশ শতকের মইধ্যা-মইধ্যি সমাই থাকিয়া ভূটিয়াঘর ডুয়ার্স জাগাখানের সমতল ভূমিত আসিয়া ছোটখাটো ব্যবসা করিবার ধরিলেও উমার উপদ্রপ শুরু হইসিলো কোচবিহারের মহারাজা উপেন্দ্রনারায়নের আমল থাকি আনুমানিক ১৭১৭ সাল নাগাদ। তার পাছোত উপেন্দ্র নারায়নের পোশানী নেওয়া বেটা কুমার দীন নারায়ন রংপুরত থাকা মুঘল ফৌজদারের সাথোত চক্রান্ত করিয়া উপেন্দ্রনারায়নক সিংহাসন থাকি জোর করি নামে দিয়া দীননারায়ন নিজে কুচবেহার রাজ সিংহাসনোত বইসেন। ইয়ার পাছোত বিতাড়িত রাজা উপেন্দ্রনারায়ন উমার সিংহাসন ফিরিয়া পাবার তানে ভূটানের দেবরাজের নগদ একেনা গোপন চুক্তি করিয়া ভূটিয়া সেনার সাহায্য নিয়া কুচবেহার -ভূটিয়া যৌথ বাহিনীর আক্রমনত চক্রান্তকারী কুমার দীননারায়নক তাড়েয়া দিয়া উপেন্দ্র নারায়ন আরৌ সিংহাসনত বইসেন। ইয়ার পর থাকি কুচবেহার রাজ্যের সীমিনার ভিতিরা 'ডুয়ার্স এলাকাত' ভূটানীলা হরেক কিচিমের উপদ্রব করিতে থাকে । আরো পরে নানান চাপে আরো কোচবিহার রাজপরিবারের ভিতরবাড়ীর ঝগড়াঝাটির কারণত গোটায় ডুয়ার্স এলাকা কুচবিহারের রাজারঠে কবারগেলে জোর করি আধি নিসিলেন ভূটিয়ারঘর।
No comments